দাঁতন: ঘুরতে ভালবাসেন? সপ্তাহের ব্যস্ত শিডিউল থেকে নিজেকে একটু সময় দিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন ইতিহাসের নানা নিদর্শন। মেদিনীপুর শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে রয়েছে ইতিহাসের অনন্য দলিল।মেদিনীপুর শহর থেকে মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে বাংলা ও ওড়িশা সীমান্ত এলাকা দাঁতনের মনোহরপুরে রয়েছে প্রাচীন রাজবাড়ি। রয়েছে রাজবংশের প্রতিষ্ঠিত ভগ্নপ্রায় নাট্যশালাও।
সপ্তাহান্তে নিজেদের কর্মব্যস্ততা থেকে নিজেকে মুক্তি দিতে ঘুরে দেখতে পারেন ইতিহাসের অন্যতম এই নিদর্শন। ইতিহাসের পাতা ঘাটলে দেখা যায়, মনোহরপুর রাজবাড়ির ইতিহাসজুড়ে আছে অগাধ কিংবদন্তী। ১৫৭৫ সালে মোগল-পাঠানের যুদ্ধের সময় আকবরের সেনাপতি টোডরমল পরিচালিত সেনাবাহিনীর অন্যতম সেনা ছিলেন লছমিকান্ত উত্তররাও। যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও রাজস্থান নিবাসী লছমিকান্ত আর স্বদেশে ফেরেননি। পরবর্তীতে দাঁতনে জমিদারির প্রতিষ্ঠা করেন। সেই রাজবংশের দ্বাদশ পুরুষ সুরেশচন্দ্র রায় বীরবর মনোহরপুরে রাজবাড়ির সামনে পিতা রামচন্দ্র রায় বীরবরের স্মৃতিতে ১৯২৬ সালে তিনতলা বিশিষ্ট ‘রাজা রামচন্দ্র নাট্যমন্দির’ গড়ে তোলেন।
রামচন্দ্র দয়ালু রাজার পাশাপাশি সঙ্গীতজ্ঞ, সাহিত্যিক ও যাত্রানুরাগী ছিলেন। পুত্র সুরেশচন্দ্র পিতার অনুসারী ছিলেন। তিনি এই নাট্যমন্দির স্থাপন করেন। কলকাতার বিখ্যাত স্টার থিয়েটারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এই নাট্যশালার। তিনতলা বিশিষ্ট নাট্যশালার মাঝেরতলায় অভিনয় হত। বেশ আধুনিক ছিল নাট্যশালা। প্রতিবছর দুর্গাপুজোয় ৩দিন, লক্ষ্মীপুজোয় ৭দিন ও দোলপূর্ণিমায় ৭দিন ধরে থিয়েটার অভিনীত হত, বসত সাহিত্যসভাও।
আরও পড়ুনঃ হুহু করে কমল দাম! মরশুমের শেষে বাঙালির পাতে ইলিশের জোয়ার, কত দামে বিক্রি হচ্ছে?
এখানে শিশিরকুমার ভাদুড়ি-সহ অনেক বিশিষ্ট অভিনেতা অভিনয় করেছেন। কিন্তু বৃহৎ এই নাট্যশালা ১৯৪২ সালের ঝড়ে ধুলিস্যাৎ হয়েছিল। শুধু দাঁড়িয়ে আছে প্রবেশ দ্বারের দুটি স্তম্ভ ও কিছু ভগ্নাবশেষ। যাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়েছে জমিদার পরিবারটি। তবে সম্প্রতি তাদের আবেদনে প্রশাসন সাড়া দিয়ে সংরক্ষণের কাজ করে। আপাতত তার চারপাশ ঘিরে সংরক্ষণের কাজ করা হয়।
এখনও রাজ পরিবারের উত্তর পুরুষেরা থাকেন পূর্ব পুরুষদের তৈরি এ বিশাল ইমারতে। তারাও চান প্রতিদিনই আসুক পর্যটকেরা। স্বাদ নিক ইতিহাসের নানা অজানা কথার। পর্যটন মানচিত্রে নতুন রূপ দেওয়ার পাশাপাশি ইতিহাস বাঁচানোর আবেদন জানিয়েছেন ইতিহাস গবেষকেরা। তবে সপ্তাহ শেষে পরিবারের সকলকে নিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন মনোহরপুর রাজবাড়ী ও নাট্যশালা।
Ranjan Chanda